এখন ফ্রিল্যান্সারদের বড় শত্রু কে?

অনেক মানুষ এখন ফ্রিল্যান্সিংকে পেশা হিসেবে বেছে নিচ্ছেন। এতে তাঁদের কর্মঘণ্টার যেমন সুবিধা থাকে, তেমনি নিজের ইচ্ছানুযায়ী কাজ করতে পারেন। বিশ্বজুড়েই এ ধরনের কাজের ক্ষেত্র বাড়ছে। তবে একই সঙ্গে তথ্যপ্রযুক্তির উন্নয়নে ফ্রিল্যান্সারদের জন্য বড় ঝুঁকিও তৈরি হচ্ছে। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা আর্টিফিশিয়াল ইনটেলিজেন্সকে (এআই) তাদের বড় প্রতিদ্বন্দ্বী বা শত্রু হিসেবে দেখা হচ্ছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ফ্রিল্যান্সাররা দ্রুত তাঁদের কাজের ক্ষেত্রে নতুন দক্ষতা যুক্ত করে নিজেকে হালনাগাদ না রাখলে কাজ পাওয়ার বিষয়টি ঝুঁকির মধ্যে পড়ে যাবে। কোম্পানিগুলো বা কাজদাতারা এআইয়ের দিকে ঝুঁকে পড়বেন।
উদ্যোক্তাবিষয়ক ওয়েবসাইট এন্ট্রাপ্রেনিউর্স ডটকমের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৭ সাল নাগাদ যুক্তরাষ্ট্রের মোট কর্মীর ৫০ শতাংশই ফ্রিল্যান্সার কর্মী হিসেবে দাঁড়াবে। একই সময়ে প্রযুক্তির দিক থেকে তাঁদের কর্মক্ষেত্রে বিপত্তি হিসেবে উঠে আসবে এআই প্রযুক্তি।
বাজার বিশ্লেষকেরা বলছেন, শুধু ফ্রিল্যান্সিং ক্ষেত্র নয়, সব ধরনের পেশার জন্যই কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার ব্যবহার ঝুঁকি তৈরি করবে। অনেকেই বারবার করতে হয় এমন কাজগুলো রোবট ব্যবহার করে করতে শুরু করবে। তবে ফ্রিল্যান্সারা চাইলে নিজেকে হালনাগাদ করে নতুন দক্ষতা শিখে এগিয়ে থাকতে পারেন।
যেভাবে নিজেকে রাখবেন
নতুন দক্ষতা অর্জন করুন: ইতিমধ্যে ৪৯ শতাংশ ফ্রিল্যান্সার এআইয়ের প্রভাব তাঁদের কাজের ওপর পড়ার কথা বলেছেন। ৬৫ শতাংশ ফ্রিল্যান্সার অবশ্য এআইয়ের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে নতুন দক্ষতা বাড়ানোর ওপর জোর দিয়েছেন। নতুন দক্ষতা বাড়াতে বিভিন্ন বিষয়ে অনলাইন কোর্স বা বিভিন্ন বিষয় শিখতে শুরু করতে পারেন। ভবিষ্যতে যেসব বিষয়ের চাহিদা তৈরি হবে, সেগুলো শিখে রাখুন। এতে শত্রুকে পরাজিত করে টিকে থাকা সম্ভব হবে।
নিজস্ব ব্র্যান্ড তৈরি করুন: ফ্রিল্যান্সার হিসেবে নিজের ব্র্যান্ড তৈরি করা জরুরি। নিজেকে এ খাতে দক্ষ করে তুলতে পারলে সহজে কাজ পাবেন। এতে প্রতিযোগীদের চেয়ে এগিয়ে থাকবেন। বিশেষ করে এআই প্রযুক্তির চেয়ে। বিভিন্ন ক্ষেত্রে নিজেকে পরিচিত করে তোলা ও কাজদাতার কাজে নিজের গ্রহণযোগ্যতা তৈরি করার মাধ্যমে নিজস্ব ব্র্যান্ড তৈরি করতে পারেন।
অনলাইন উপস্থিতি: ফ্রিল্যান্সিং পেশায় কাজ করতে হলে নিজের অনলাইন উপস্থিতিকে জোরদার করতে হয়। ক্রেতা বা সেবাগ্রহীতা অনেক সময় দেশের বাইরে বসে আপনার কাজ সম্পর্কে ধারণা পেতে চায়। আপনার অনলাইন উপস্থিতি যতটা ইতিবাচক ও পেশাদার হবে, ততই আপনার জন্য সুবিধা হবে। অনলাইন উপস্থিতির বিষয়টি নিশ্চিত করতে নিজস্ব ওয়েবসাইট তৈরি, সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে নিজের উপস্থিতি বাড়াতে হবে। নিজের লোগো, বিজনেস কার্ড থাকাটাও জরুরি।
এআইকে বন্ধু হিসেবে নেওয়া: এআই বা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাকে কাজের জন্য বাধা হিসেবে না নিয়ে বন্ধু বা সহায়তাকারী হিসেবে গ্রহণ করতে হবে। প্রযুক্তিবিষয়ক ওয়েবসাইট ভেঞ্চারবিটের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, প্রতিষ্ঠানের কাজের জন্য কর্মী প্রয়োজন হবেই। এর পেছনে নানা যুক্তি আছে। স্বয়ংক্রিয়ভাবে কাজ করতে পারে এমন সফটওয়্যার বা যন্ত্র ব্যবহার শুরু হলেও ফ্রিল্যান্সারদের চাহিদা দ্রুত শেষ হবে না। বিশেষ করে এআইয়ের ব্যবহার বাড়লেও ওয়েব ডেভেলপার, হিসাবরক্ষক, আইনজীবী, পরামর্শকসহ নানা ক্ষেত্রেই ফ্রিল্যান্সারদের চাহিদা থাকবে। এআই এ ক্ষেত্রে আরও বেশি সহায়তা করতে পারবে। এআইসংক্রান্ত টুলগুলোর ব্যবহার আয়ত্তে আনতে পারলে কাজের জন্য নানা সুবিধা পাবেন।
কমিউনিটির সঙ্গে যুক্ত থাকা: ফ্রিল্যান্সার মানে একা একা কাজ করে যাওয়া নয়। আপনার আশপাশের অন্য ফ্রিল্যান্সারদের নিয়ে কমিউনিটি হিসেবে কাজ করাটা গুরুত্বপূর্ণ। ক্রেতা, কাজদাতা, কর্মী, সহকারীসহ সবাইকে নিয়ে একটি বড় কমিউনিটি হিসেবে কাজ করতে পারলে অন্যদের সহায়তাসহ নানা সুবিধা পাবেন। এতে কাজের জন্য যেমন উৎসাহ পাবেন, তেমনি নানা উঠতি ট্রেন্ড সম্পর্কেও জানাশোনা থাকবে।
কাজ বাছাই: ফ্রিল্যান্সিং ক্ষেত্রে নেমে দক্ষ না হয়ে যা পেলাম তা–ই করলাম, এমন ধারণা নিয়ে এগোলে বেশি দূর যাওয়া সম্ভব নয়। কাজের মান বাড়াতে হবে। তবেই অত্যন্ত প্রতিযোগিতার এ বাজারে অন্যদের চেয়ে এগিয়ে থাকা সম্ভব হবে।

Comments