কম্পিউটারের বিভিন্ন পার্টসের বৈপ্লবিক নানান পরিবর্তন হলেও সবই এখনও ব্যাটারি নির্ভর, তবুও এই ব্যাটারিই যেন সবচেয়ে বেশি অবহেলারও শিকার।
আসুন জেনে নিই ব্যাটারি চার্জ দিয়ে কিভাবে অনেকক্ষন ব্যবহার করা যায় এবং কিভাবে একে দীর্ঘদিন ভাল রাখা যায়:
ল্যাপটপ ব্যাটারির সাধারণ যত্ন...
ব্যাটারি চার্জ দেয়ার জন্য আসল চার্জার ব্যবহার করা উচিত।
তাপ ধরে রাখে এমন সারফেস বা জায়গার ওপর ল্যাপটপ না রাখা ভাল, এতে ল্যাপটপ এর পাশাপাশি ব্যাটারিও গরম হয়।
ল্যাপটপের বাতাস বের করার জন্য থাকা ভেন্টিলেশন এর মুখগুলো নিয়মিত পরিষ্কার রাখা উচিত।
সহজসাধ্য হলে ব্যাটারিটি খুলেও পরিষ্কার করে নিতে পারেন।
পারিপার্শ্বিক বাহ্যিক তাপ বেড়ে গেলে ব্যাটারি আরও বেশি গরম হয়, যা তার জন্য ক্ষতিকর। তাই নরমাল বা শীতল পরিবেশে ল্যাপটপ ব্যবহারের চেষ্টা করা উচিত।
ব্যাটারির যত্ন নিতে আপনাকে সাহায্য করার জন্য পারদর্শি ‘ব্যাটারি মনিটোরিং’ অ্যাপ বা সফটওয়্যার ব্যবহার করতে পারেন। এসব সফটওয়্যার এর ডায়াগনোসিস এর ওপর ভিত্তি করে আপনি বিভিন্ন ব্যাটারি সেটিং বাছাই করতে পারবেন প্রস্তাবিত পদ্ধতি অনুসরণ করে।
ব্যবহার করুন কুলিং ফ্যান। তবে কুলিং ফ্যান এর বিদ্যুৎ উৎস যেন ল্যাপটপ না হয় সেটা খেয়াল রাখুন। কুলিং ফ্যানের পাওয়ার ইউএসবি পোর্ট মোবাইল এর এডাপ্টারে লাগিয়েও কুলিং ফ্যান চালু রাখা যেতে পারে।
প্রয়োজনের অতিরীক্ত ল্যাপটপ ব্যবহার করবেন না। বিনা কারণে চার্জে লাগিয়ে দিনের পর দিন রেখে দিবেন না।
কিনে রাখতে পারেন বাড়তি একটি বহনযোগ্য ল্যাপটপ ব্যাটারি চার্জার।
ল্যাপটপ চলাকালীন সময়ে ব্যাটারির যত্ন...
ডিসপ্লের ব্রাইটনেস কমিয়ে ব্যবহার করুন। ল্যাপটপে সাধারনত ব্রাইটনেস কমানো বা বাড়ানোর ‘কি’ বা বাটন থাকে। মনিটর ব্যবহার না করলে বন্ধ রাখা উচিত।
ইন্টারনেট ব্যবহার না করার সময়ে ওয়াই-ফাই বন্ধ রাখুন। ওয়াই-ফাই প্রতি মুহুর্তে চার্জ খরচ করতে থাকে, যখন এটি ডিসকানেক্টেড থাকে তখনও সে নেটওয়ার্ক খুঁজতে থাকে। এটি বন্ধ রাখলে ব্যাটারির ওপর চাপ কম পরে।
বর্তমানের অধিকাংশ ল্যাপটপে দারুন সাহায্যকারী পাওয়ার সেটিং রয়েছে। উন্ডোজ ১০ এ পাওয়ার অপশন এ গিয়ে পাওয়ার সেভার বাছাই করলে ল্যাপটপের চার্জ কম খরচ হয়।
ল্যাপটপের চার্জ বাঁচানোর জন্য ‘স্ট্যান্ডবাই মোড’ এরচেয়ে ভাল মোড হচ্ছে ‘হাইবারনেশন মোড’। আপনি এই দুই মোড এ যাবার আগে কাজ যে পর্যন্ত করে রেখেছিলেন, সাধারন মোডে ফিরে আসার পর আবার সেখান থেকেই কাজ শুরু করতে পারবেন।
ব্যবহৃত অবস্থায় না থাকলে ইউএসবি পোর্টের সকল ইউএসবি ডিভাইস খুলে রাখা উচিত।
অব্যবহৃত অ্যাপস বা সফটওয়্যার ডিজএবেল বা আনইন্সটল করে রাখুন।
ল্যাপটপ চলাকালীন সময়ে ব্যাটারি শতভাগ চার্জ হয়ে যাবার পর (ব্যাটারি কখনই ওভারচার্জ হয় না) যদি ব্যাটারির তাপমাত্রা বেড়ে ৬০ ডিগ্রি সেলসিয়াস (60ºC) হয়ে ওঠে তাহলে সকেট থেকে ব্যাটারি সংযোগ খুলে নিতে হবে। তবে ৪০-৫০ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত ব্যাটারি সংযুক্ত রাখতে পারেন।
ব্যাটারি চার্জ না দেয়া অবস্থায় থাকলে ৮০/২০ পদ্ধতি ব্যবহার করুন, ৮০% চার্জ হবার সাথে সাথেই সংযোগ খুলে ব্যবহার করতে পারবেন, তেমনি ২০% এর নীচে কখনই যাবেন না। আর হ্যা ১০০% চার্জ দিয়ে সাথে সাথেই ল্যাপটপ ব্যবহার করবেন না।
ল্যাপটপ অব্যবহৃত অবস্থায় থাকার সময়ে ব্যাটারির যত্ন...
ল্যাপটপ বন্ধ করার পর সাথে সাথেই ব্যাগে না ঢুকিয়ে ১০-১৫ মিনিট বাইরেই রাখুন। এতে ব্যাটারি ও ল্যাপটপ দ্রুত ঠাণ্ডা হতে পারে।
ব্যাটারি অনেকদিন ব্যবহার করার দরকার না পরলে ৪০% চার্জ দিয়ে শীতল জায়গায় সংরক্ষন করতে পারেন। ভুলেও ১০০% চার্জ দিয়ে রাখবেন না।
ব্যাটারি ফ্রিজে রাখতে চাইলে একটা এয়ার-টাইট জিপব্যাগে রাখতে হবে। আর ব্যবহারের আগে অবশ্যই শুষ্কতা নিশ্চিত করে ব্যাটারিকে রুমের তাপমাত্রার সাথে মিলিয়ে নিতে হবে।
যা যা করা যাবে না...
আপনার ল্যাপটপ ব্যাটারি লিথিয়ান-আয়ন ব্যাটারি হলে কখনই পুরোপুরি চার্জ শূন্য করবেন না (চার্জশূন্য করা একটা জনপ্রিয় ভুল ধারণা)।
ডিস্ক ড্রাইভে বিনা কারণে সিডি ডিভিডি রাখা যাবে না।
সেলফোন চার্জ দিতে ল্যাপটপ ব্যবহার করবেন না।
স্ক্রিন সেভার ব্যবহার বন্ধ করুন। এতে ল্যাপটপের ওপরে বাড়তি প্রেশার পরে, চার্জ বেশি খরচ হয়।
এক্সটারনাল হার্ডড্রাইভের বা রিমুভেবল ডিস্কের ফাইল সরাসরি খোলা যাবে না, আগে মূল ড্রাইভে কপি করে নিতে হবে।
ব্যাটারি সেভিং মুডে ল্যাপটপ চালালে কোনো অতিরীক্ত পাওয়ার-কনজিউমিং মাল্টিটাস্ক করবেন না।
আপনার একটু সচেতনতা আর নিয়মিত যত্নই পারে আপনার ব্যাটারির দারুন পারফরমেন্স আর দীর্ঘ জীবনকাল নিশ্চিত করতে।
Comments
Post a Comment