AMD’র নতুন জেনারেশনের Ryzen প্রসেসরসমুহ বুলডোজার প্রসেসরকে পেছনে ফেলে এগিয়ে যাচ্ছে আরও বেশি প্রতি-কোর (per-core) পারফরম্যান্স-এর নিশ্চয়তায়, শক্তির দক্ষতায় এবং বর্তমান সময়ের প্রযুক্তির সহায়তায়। তাই প্রশ্ন দাড়াচ্ছে, রাইজেন ফ্যামিলি যা কিনা তিনটি শাখায় বিভক্ত, তার মধ্যে আপনি কোনটি কিনবেন?
আসুন আগে এদের সাথে ভালমত পরিচিত হয়ে নেই:
Ryzen 7: কিনুন ম্যাক্সিমাম মাল্টি-থ্রেড পারফরম্যান্স এর জন্য
যখন আমরা কম্পিউটার এর পারফম্যান্স এর কথা বলি তখন আমরা একটি CPU করতে পারে এমন বহুবিধ কাজের কথা মাথায় রাখি। চলুন আমরা তেমন কিছু কাজ আমরা রাইজেন ফ্যামিলির সবগুলো প্রসেসর দিয়ে করি যেন আমরা এদের মধ্যকার পারফরম্যান্সটা তুলনা করতে পারি।
মনে রাখতে হবে কম কোর মানে হচ্ছে প্রতি কোরে আরও বেশি ক্লক-স্পিড। তাই ফলাফল আলাদা হবে, এবং সেটা নির্ভর করতে প্রতিটা চিপে কয়টা করে কোর আছে তার ওপর। আরও দেখতে হবে কোর মডেলের ডান পাশে ‘X’ আছে কি না। ‘X’ দিয়ে AMD’র Extended Frequency Range বোঝায়।
বর্তমানের সফটওয়্যারগুলো সাধারনত সিঙ্গেল-কোরকে অতিমাত্রায় কাজের চাপ দিতে পারে না। অধিকাংশ প্রোগ্রামই স্বল্প CPU পাওয়ারেই চলতে পারে।
একটি আদর্শ পরিস্থিতিতে পূর্ণ ওয়ার্কলোড দিলে কোরগুলো কেমন শক্তি উৎপন্ন করতে পারে তা নিচে দেখানো হলো।
আমাদের প্রথম প্রাকটিক্যাল টেস্ট Handbrake (ভিডিও ফাইল ট্রান্সকোডার) দিয়ে যা খুব সহজেই এই প্রসেসরগুলো চালাতে পারে। কোর যত বেশি শক্তি তত বেশি- বিশেষত ভিডিও এনকোডিং এর ক্ষেত্রে। Ryzen 7 1800X অল্প কোরের যে কোন প্রসেসর থেকে অনেক দ্রুত ভিডিও এনকোড করে ফেলতে পারে।
একগুচ্ছ জটিল কাজ এর জন্য অতিরীক্ত কোর থাকাটা সুবিধাজনক। তাই Cinebench test –এ আমরা দেখতে পাই বেশি কোরের Ryzen 7 অন্যান্য সকল প্রসেসর- এমনকি শক্তিশালী Ryzen 5 -থেকেও পারফরম্যান্স এ এগিয়ে।
এবার দুটি ব্রাউজার এর কাজে প্রসেসরগুলোর পারফরম্যান্স দেখা যাক। একটি ব্রাউজারের জন্য এক কোরের বেশি লাগে না। তাই বাকি কোর অবশিষ্ট্য থেকে যায়। অবশিষ্ট্য থাকায় কোর ফ্রিকোয়েন্সি বাড়িয়ে ওভার অল পারফরম্যান্স বাড়িয়ে দেয়।
ফলে এখানেই অনেকটা পরিষ্কার বোঝা যাচ্ছে আপনার কোন প্রসেসর চাই। হাই-প্রোফাইল গেমস ও সফটওয়্যার এর কাজ করতে চাইলে অবশ্যই Ryzen 7 কিনতে হবে। Ryzen 3 এক্ষেত্রে খুব বেশি ভাল ভূমিকা রাখতে পারবে না। একইভাবে আপনার চাহিদা স্বল্প হলে, Ryzen 3 ই হবে বেষ্ট অপশন। কারন এটি আমাদের প্রতিদিনকার কাজ যেমন: ইমেইল চেক করা, ভিডিও দেখা ও ওয়েব ব্রাউজ করার চেয়েও অধিক শক্তি ধারণ করতে পারে। সেখানে এসব কাজের জন্য Ryzen 7 কেনা অর্থ হয়ত কোর এর এক ধরনের অপচয়।
মিড-রেঞ্জ গেমিং এর জন্য Ryzen 3 কিনুন আর বাকি সবকিছুর জন্য Ryzen 5
মাল্টি-কোর সিনারিও তে Ryzen অবশ্যই দুর্দান্ত। কিন্তু পাশাপাশি এটা গেইমিং প্রসেসর নামেও পরিচিত। কারণ মাত্রাতিরিক্ত উচ্চ কোর সংখ্যা গেমস-এ তেমন কোন বিশেষ সুবিধা দেয় না চললেই চলে।
গ্রাফিক্স কার্ড বা ভিডিও কার্ড এর ব্যালেন্স করলে Ryzen 3 1300X প্রসেসর দিয়েই অধিকাংশ গেমস খেলা যাবে। Ryzen 3 1300X এর সাথে ভিডিও কার্ড GTX 1070 এর ব্যালেন্স হতে পারে যুতসই।
এভাবে আপনি যদি লোয়েস্ট-এন্ড প্রসেসর এর সাথে মিড-এন্ড ভিডিও কার্ড পেয়ার করে যদি হাই-এন্ড গেমস খেলতে চান Mankind Divided তবে আপনার জন্য ভাল Ryzen 3 1300X (যদি আপনার RX 580 অথবা GTX 1060 ভিডিও কার্ড থাকে), অথবা Ryzen 5 (সাথে আরও গতির ভিডিও কার্ড).
আর হাই-এন্ড গেমিং এর জন্য আপনি চোখ বুজে যেটা কিনতে পারেন- সেটা হচ্ছে ছয়টি কোর বিশিষ্ট Ryzen 5 1600X
আরও জেনে নিন:
এটা সত্যি দুরুহ বলা যে কোন রাইজেন প্রসেসর আপনি কিনবেন, কারণ রাইজেনের রয়েছে বিভিন্ন দামের প্রসেসর যার পারফরম্যানস দারুন। তাই আপনার উচিত হবে আপনার বর্তমান ওয়ার্কলোড ও ভবিষ্যতের ওয়ার্কলোড সম্পর্কে ধারণা নিয়ে একটা ভারসাম্যপূর্ণ কম্পিউটার সিস্টেম দাড় করানো।
তাই প্রসেসর বাছাই করার আরেকটি পদ্ধতি হতে পারে ভ্যালু পার ডলার হিসেব করা।
তাই বোঝা যাচ্ছে যে হাই-এন্ড প্রসেসরগুলোর চেয়ে শক্তির বিচারে না হলেও Ryzen 3 1300X এবং Ryzen 3 1200 দাম ও মানের হারের ভারসাম্যে এগিয়ে। এটা কোনো বিস্ময়ের ব্যপার নয়। কারন প্রসেসর যত শক্তিশালী হবে তার সাথে প্রিমিয়াম যুক্ত থাকার ফলে দাম ও মানের হার এর ভারসাম্য সভাবতই কম হবে।
রাইজেন বাছাইয়ের আরেকটা গুরুত্বপূর্ণ দিক হচ্ছে এই প্রসেসরগুলো বসবে একেবারেই নতুন মাদারবোর্ড প্ল্যাটফরমে, তাই পরবর্তিতে আপনার ওয়ার্ক লোড বেড়ে গেলেও মাদারবোর্ড পরিবর্তনের দরকার হবে না। আপনি প্রসেসর আপডেট করলেই হবে। বাজারের অধিকাংশ লেটেস্ট গেইমিং মাদারবোর্ডে রাইজেন ফ্যামিলির সকল চিপ সংযুক্ত করা যাবে।
আপনার কাজ যদি হাই-এন্ড গেমস খেলা হয়, কিংবা ভিডিও এনকোডিং অথবা কম্প্রেসিং হয় তবে Ryzen 7 1700 হবে সবচেয়ে ভাল চয়েস। এর পারফরম্যানসও প্রায় Ryzen 7 1800X এর মত।
সহজ কথায় চিড়ে ভেজাতে চাইলে:
আপনি যদি এখনও সংশয়ে থাকেন- তাহলে দুঃশ্চিন্তা করবেন না, আরও সহজ করে বিষয়টা প্রস্তাব করা যায়:
আপনার বাজেট যদি মডেস্ট হয়, গেমস খেলাই যদি সবচেয়ে বড় উদ্দেশ্য হয়- তাহলে আপনার দরকার Ryzen 3 1300X.
আপনি কি হাই-এন্ড গেইমস খেলতে আগ্রহী? – তাহলে আপনি বাজেট অনুযায়ী কিনবেন Ryzen 5 1500X or 1600X.
আপনার একটা ওয়ার্কস্টেশন দরকার? কিনে ফেলুন Ryzen 7 1700.
তাই আপনি যে প্রসেসরই কিনুন না কেন আপনি প্রসেসর দুনিয়ার চরম প্রতিযোগি Ryzen এর পারফরম্যানস- এ খুশিই হতে যাচ্ছেন। কারন বর্তমান সময়ের সকল ধরণের ওয়ার্কলোড-ই এই প্রসেসরগুলো নেবার ক্ষমতা ধারণ করে।
Comments
Post a Comment